মিসরের পিরামিড। রহস্যেঘেরা এক প্রাচীন স্থাপনা। পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের মধ্য অন্যতম এই পিরামিডগুলো। অনন্য নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি এ অবকাঠামা সবাইকেই অবাক করে। স্থাপত্যগুলো প্রতিটি পরতে পরতে যেন বিস্ময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে বিশাল আকৃতি এই পিরামিডগুলো আসলে কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। তাবৎ বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত গলদঘর্ম হয়েছেন এর রহস্য উদঘাটনে।

কারো মতে, পিরামিডগুলো মিসরের তৎকালীন শাসক যাদেরকে ‘ফারাও’ বলা হতো তাঁদের সমাধিক্ষেত্র। আবার কেউ বলেছেন এটা আসলে ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র নয়, এটি আসলে শস্য সংরক্ষণের জন্য বানানো হয়েছিল। কারো ধারণা, ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো এলিয়েন স্থাপনাগুলো বানিয়েছিল। আবার বিজ্ঞানী নিকোলাস টেসলাও পিরামিড নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। টেসলার মতে, পিরামিডগুলো আসলে এনার্জি প্লান্ট হিসেবে ব্যবহার হতো।

এমন নানা মুণির নানা মতের মধ্যে পিরামিডগুলো নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাও রয়েছে। প্রাচীন মিসরীয় সমাজে পরকালের ধারণা প্রচলিত ছিল। সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই এই বিরাট আকারের সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করা হয় বলে জানা যায়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্রকাশিত এক প্রবন্ধের বলা হয়, মিসরের মানুষ বিশ্বাস করত যতদিন ফারাওদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তবে তার জন্য পৃথিবী থেকে পরকালের যাবার সময় আত্মার নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। এই আত্মাকে তারা ডাকতো ‘কা’ বলে। এই ‘কা’ বেঁচে থাকার জন্য প্রসাদ আকারে খাবার, বিশ্রামের জন্য বিছানাসহ কিছু ব্যবস্থার দরকার ছিল বলে তারা মনে করত। আর সে কারণেই প্রয়োজন পড়ে পিরামিডের।

প্রাচীন মিসরীয়রা বিশ্বাস করত, পিরামিডের ভেতরে ফারাওদের ‘কা’ বেঁচে থাকত। আর তাই ফারাওদের শরীর মমীকরণ করা হতো। তারা এটাও বিশ্বাস করত যে পরপারের যাত্রার জন্য জাগতিক সব ধরনের জিনিসই প্রয়োজন হবে ‘কা’র। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সঙ্গে প্রয়োজন মতো ধন-সম্পদ দিয়ে দেয়া হতো।

blue and brown egyptian coffin
Photo by Miguel Á. Padriñán on Pexels.com

পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খণ্ড দিয়ে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে এমনভাবে পিরামিড তৈরি করা হত যে, একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝের অংশে একচুলও ফাঁক থাকত না। মিসরীয়রা মনে করত যতদিন রাজাদের দেহ রক্ষা করা যাবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এখনো তাদের অনেক রাজা স্বর্গে আছেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মিশসরবিদ পিটার ডার ম্যানুয়েলিয়ান বলেন, ‌‘অনেকেই আধুনিক অর্থে জায়গাটিকে কেবল একটি সমাধিক্ষেত্র হিসেবে মনে করেন, কিন্তু এটি তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এই সুসজ্জিত সমাধিগুলোতে প্রাচীন মিসরীয় জীবনের প্রতিটি দিকের বিস্ময়কর উপস্থাপন রয়েছে- তাই এটি কেবল মিসরীয়রা কীভাবে মারা গিয়েছিল তা-ই নয় বরং তারা কীভাবে বেঁচে ছিল সেটাও বলে।’

পিরামিড নির্মাণের আগে মিসরীয়দের কবর দেয়ার পদ্ধতি ভিন্ন ছিল। তখন সমাধি দেয়া হতো চারকোনা ছোট আকৃতির ঘরে, যার নাম ছিল মাস্তাবা।

জাদুঘর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশনের ওয়েবসাইটে প্রাচীন মিসর নিয়ে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে এর উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খ্রিস্টপূর্ব ২৭৮০ অব্দের দিকে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া আকৃতির পিরামিড নির্মাণের জন্য একটির ওপর আরেকটি– এভাবে ছয়টি ধাপে প্রথম পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল।

জোসের নামের একজন ফারাওয়ের জন্য নির্মাণ করা এই পিরামিডের কোণাগুলো মসৃণ না হলেও এটাকেই প্রথম সত্যিকারের পিরামিড হিসেবে ধরা হয়।

প্রচলিত আছে, এই সমাধির নকশাকারের নাম ছিল ইমহোতেপ। তাকেই পিরামিডের প্রথম নকশাকার হিসেবে ধরা হয়। প্রথম পিরামিড নির্মাণের পর পরবর্তী ফারাওরা আরও ভালো এবং বড় আকারের পিরামিড নির্মাণ শুরু করেন।

পিরামিডের কথা বললে প্রথমেই যে ছবি ভেসে ওঠে তা হলো মিসরের গিজার গ্রেট পিরামিড। ৪৫০ ফুট বা ১৩৯ মিটারের বেশি উচ্চতার এই পিরামিড খুফুর পিরামিড নামেও পরিচিত। কায়রোর উপকণ্ঠ গিজায় অবস্থিত তিনটি পিরামিডের মধ্যে এটিই সবচেয়ে পুরাতন এবং বড়। তবে নির্মাণের সময় খুফুর পিরামিড আরও কিছুটা উঁচু ছিল বলে ধারণা করা হয়।

ancient egyptian pyramids
Photo by kendincefotograf on Pexels.com

প্রায় ৬০ টন ওজনের ৩০ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের বিশাল আকৃতির ২০ লাখ পাথর খণ্ড দিয়ে নির্মিত এই পিরামিডটি তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে তৈরি করা হয়েছিল।

দেশটিতে ১০০’র বেশি পিরামিড অক্ষত থাকলেও এই পিরামিডটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিশাল আকৃতির এই কাঠামোর মাত্র কয়েকটি কক্ষেই প্রবেশ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৪৭ মিটার দীর্ঘ ও আট মিটার উঁচু গ্র্যান্ড গ্যালারি।

ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২৫০৯ থেকে ২৪৮৩ অব্দের মধ্যে ফারাও খুফুর শাসনামলে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে খাফ্রে এবং মেনকাউরে এর পাশে আরও দুটি পিরামিড নির্মাণ করেন।

গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ যুক্তরাজ্যের পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়বসাইটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ক্লাসিকস অ্যান্ড এনশিয়েন্ট মিডেটারিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ডোনাল্ড রেডফোর্ডের বরাত দিয়ে পিরামিড নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ থেকে তিরিশ হাজার কারিগর নিয়ে ২৩ বছরেরও কম সময়ে গিজার পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ পারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রাল তৈরিতে সময় লেগেছিল ২০০ বছরেরও বেশি।

অধ্যাপক রেডফোর্ডের মতে পিরামিড নির্মাণকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কৃষক।

‘পিরামিডে কাজ করা কৃষকদের ট্যাক্স বিরতি দেওয়া হতো এবং তাদের শহরে নেয়ার পর আশ্রয়, খাদ্য এবং পোশাক দেওয়া হতো’- বলেন তিনি।

পিরামিড কারা বানিয়েছিল- এই প্রশ্নের দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত উত্তর ছিল দাস। ধারণা করা হতো বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষদের ধরে এনে ‘নির্দয়’ ফারাওরা দাস বানিয়ে তাদের দিয়ে পিরামিড নির্মাণ করাত। আর এই ধারণার শুরু জুডিও-খ্রিস্টান ধারণা থেকে। পরে এটি জনপ্রিয়তা পায় সিসিল বি. ডি মিলের ‘দ্য টেন কমান্ডমেন্টস’র মতো হলিউড সিনেমার হাত ধরে।

কিন্তু পিরামিডের দেয়ালে আঁকা ছবিগুলো থেকে ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হার্ভার্ড ম্যাগাজিনে জনাথন শ’ প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্ক লেহনারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

পিরামিড দাসরা বানিয়েছিল- প্রচলিত এই ভুল ধারণার বিপরীতে যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি। মার্ক লেহনারের পিরামিড নির্মাণকারীদের বসবাসের শহর খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে লেখাটিতে পিরামিডের কারিগরদের জীবনযাপনের বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরা হয়েছে।

বিশেষ করে তারা সেখানে যে ধরনের খাবার খেতেন তা থেকে বোঝা যায় দাস বা সাধারণ কর্মী না, তারা ছিলেন দক্ষ কারিগর।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অ্যামেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ জর্জ রিনজার পিরামিডের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি দেখতে পান, যেখানে পিরামিড নির্মাণকারীদের খুফুর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

egyptian symbols
Photo by Lady Escabia on Pexels.com

মিস্টার লেহনারের ধারণা, মিসরীয় সমাজ কিছুটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হতো, যেখানে প্রায় প্রত্যেকেই শাসকের সেবা করতেন। মিসরীয়রা একে বলত বাক।

‘সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে তাদের উপরে থাকা লোকদেরকে কোনো না কোনোভাবে বাক দিতে হতো। কিন্তু এটা আসলে দাসত্ব হিসেবে বিবেচ্য হতো না’- বলেন লেহনার।

এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও বাক দিতে হতো।

পিরামিড নির্মাণের খরচ অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় ফারাওরা শেষ পর্যন্ত ওল্ড কিংডম বা প্রাচীন সাম্রাজ্যের শেষের দিকে পিরামিড নির্মাণ বন্ধ করে দেয়।

এছাড়া বিরাট আকারের পিরামিডগুলোতে ধন-সম্পদ পাওয়া যাবার কারণে মিসরীয়রা নিজেরাই সেগুলো লুট করে নিতো। পরে পিরামিড তৈরির বদলে ভ্যালি অব কিংসের গোপন সমাধিক্ষেত্রে ফারাওদের সমাহিত করা হতো।

পিরামিড নির্মাণের প্রচলিত ধারণার মধ্যে একটি ছিল শস্যের গুদাম হিসেবে এর ব্যবহার। ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী, জোসেফকে তার ভাইয়েরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় এবং পরে ফারাওয়ের স্বপ্নের ব্যাখ্যার পর গুদামে খাদ্য সংরক্ষণ করে সাত বছরের দুর্ভিক্ষের হাত থেকে মিসরীয়দের বাঁচায়।

বাইবেলে পিরামিডের কোনো উল্লেখ না থাকলেও মধ্যযুগের বিভিন্ন গল্পে এর উল্লেখ রয়েছে। ষষ্ঠ শতাব্দীর ফ্রাঙ্কিশ বিশপ সেন্ট গ্রেগরি অফ ট্যুরসও এই ধারণা জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রেখেছিলেন।

জন ম্যান্ডেভিলের ১৪ শতকের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্মৃতিকথায় জোসেফের গুদাম ঘরের উল্লেখ করেন, যেখানে কঠিন সময়ের জন্য গম সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি লিখে গেছেন। কিন্তু রেনেসাঁর সময় থেকে যখন এ নিয়ে আরও ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়, তখনই এই ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

‘এখন অবশ্যই আমরা জানি যে পিরামিডগুলো মূলত সমাধি কক্ষ ছিল- যদিও সেটা অনেকগুলো বিষয়ের একটি। পিরামিডের স্থাপত্যে এর আগের এবং পরের সময়ের কাঠামো, ভেতরের সুড়ঙ্গপথ এবং সেখানকার জায়গার কার্যকারিতা থেকে মিসরের পরবর্তী সময়কে বোঝা যেতে পারে,’- বলেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ অধ্যাপক জন ডার্নেল।

পিরামিডের ভেতরের প্রধান উপাদান পাথর ও ইট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই সেখানে শস্যের জন্য খুব বেশি জায়গা থাকবে না এবং একইসঙ্গে এটি শক্তি ও প্রকৌশলের বিশাল অপচয় হবে।’

তাছাড়া প্রাচীন শস্যভাণ্ডারগুলো ছোট মৌচাক আকৃতির ছিল বলেও জানান তিনি।

একইসঙ্গে জোসেফের গল্পটি সম্ভবত মিসরের মধ্য সাম্রাজ্যের সময়ের, যা কিনা গিজার পিরামিড তৈরির কয়েক শতাব্দী পরে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ডার্নেল।

যদিও বলা হয় পিরামিড বানানো হয়েছিল ফাড়াও রাজাদের সমাধি হিসেবে ব্যবহারের জন্য। মৃত্যু পরবর্তী তাদের জীবনকে সম্মান করার জন্য। কিন্তু সত্যি এটাই যে পিরামিডের মধ্যে এখন পর্যন্ত একটি মোমিও পাওয়া যায়নি। অনেক ইজিপশিয়ান ফারাও মোমি যদিও এলি অব দ্য কিংযের বল্টে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সে বল্টের অবস্থানও পিরামিড থেকে বেশ দূরে।

silhouette of pyramids during sunset
Photo by Diego F. Parra on Pexels.com

এই প্রশ্নের উত্তর এনেছিলেন ক্রিস্টোফার ডান। প্রখ্যাত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্টোফার ডান যিনি রীতিমতো নকশা করিয়ে দেখিয়েছিলেন, কিভাবে পিরামিডের আশেপাশের ভাস্কর্য গুলো নকশা মেনে তৈরি করা হয়েছিল।সেই বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার তার বই গিজা ‌‘পাওয়ার প্লান্ট টেকনোলজিয়ান লজিস অফ ইনিসিয়ান ইজিপ্ট’ বইয়ে বিশ্লেষণ করে দেখান পিরামিডকে এনার্জি প্লান্ট হিসেবে ব্যবহার করার পেছনে কারণ আছে যথেষ্ট।

পাশাপাশি এই বইয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন কীভাবে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি হতো। পিরামিডের ভেতরের নানা চেম্বারে। তার প্রমাণ কিংবা দাবি যে অমূলক নয় সেটার প্রমাণ হিসেবেই বোধ হয় সে সময় অনেক পিরামিডের দেয়াল থেকেই পাওয়া গিয়েছে বিস্ফোরক এবং কেমিক্যাল এনিমেলসের নানা রকম দাগও।

সেই সাথে ফাটলের বড় বড় ক্ষত চিহ্ন। প্রশ্ন উঠেছে তখন প্রায় ৩০০ টন ওজনের পাথর প্রচণ্ড শক্তি ছাড়া সে পাথরের গায়ে ফাটলটা কীভাবে ধরল। তাছাড়া গ্রেট পিরামিডে এবং কিংস চেম্বারের দেওয়ালের গায়েও যে ফাটলের গভীর দাগ হলো সেটা কীভাবে।

পিরামিডের ইন্টারনাল চেম্বার, জেগুল কিংস চেম্বার এবং কুইন চেম্বার নামে পরিচিত। তা মূলত দুর্লভ এক ধরনের গ্রানাইট দিয়ে গঠিত যার নাম রোজ গ্রানাইট। যে গ্রানাইট বহু মাইল দূর থেকে আনা হয়েছিল গিজায়। মজার ব্যাপার হলো এই রোজ গ্রানাইটে রয়েছে সিলিকন ডাই অক্সাইড যা কোয়ার্ডস নামে পরিচিত।

এবার এই কোয়ার্ডস যখন সংকুচিত হয় কিংবা চলাচল করে তখন সে একটা চার্জ তৈরি করে যাকে পিজো ইলেকট্রিসিটি বলে। কোয়ার্ডসকে আমরা মডার্ন সব ডিভাইসে, যেমন টিভি, ঘড়ি, জিপিএস এই সব কিছুতেই খুঁজে পাই। ইন্টার্নাল কিংস এবং কুইন এর চেম্বারে যে রুলস গ্রানাইট পাওয়া গেছে তার ৮৫% ছিল কোয়ার্ডস। ইন্টার্নাল চেম্বারকে কানেক্ট করার টানেল এবং প্যাসেজ ওয়েতে ছিল ভালো পরিমাণে কোয়ার্ডস। যদি এই কোয়ার্ডস ঠাসা গ্রানাইট গুলোর উপরে ভালোভাবে প্রেসার দেওয়া হয় তাহলে তারা বেশ ভালো পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণা ও সিক্রেট চেম্বার গুলো থেকে পাওয়া কেমিক্যাল স্যেমপলে উঠে আসে অন্য তথ্য। সিক্রেট চেম্বার গুলোর একটি, কুইন্স চেম্বারকে ব্যবহার করা হতো কেমিক্যাল রিএকশনের জন্য।

যেখানে তৈরি হতো হাইড্রোজেন। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে তৈরি হত এই হাইড্রোজেন। প্রথমত পিরামিডের ভেতরে দুই খাদ দুই দিক থেকে এসে মিলতো হতো কুইন্স চেম্বারে। উত্তর খাত থেকে আসতো হাইড্রোক্লোরিক এসিড দক্ষিণ খাত থেকে আসতো হাইড্রেট জিংক ক্লোরাইড। দুইটি কেমিক্যাল একত্রিত হয়ে তৈরি হতো হাইড্রোজেন। আর এই হাইড্রোজেন গ্যাস কুইন্স চেম্বার থেকে প্রবাহিত হয়ে হরাইজেন্টাল প্যাসেজ ধরে পৌছাতো গ্রান্ড গ্যালারিতে। যেখানে ছিল রুলস গ্রানাইট। হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রানাইট গুলোকে চাপ দিত আর তৈরি হতো ইলেকট্রিসিটি।

বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলাও ওয়ারলেস পাওয়ার সাপ্লাই নিয়েও বিস্তর গবেষণার একপর্যায়ে এসে তিনি ঘোষণা করেন পিরামিড আসলে একটা ওয়ারলেন্স পাওয়ার প্লান্ট। এর পরই নিকোলা টেসলা পিরামিড নিয়ে শুরু করেন সিরিয়াস গবেষণা।

টেসলা পিরামিডের মতো পৃথিবীর কম্পন ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে তা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিনামূল্যে সবাইকে। যে জন্য মূলত ওয়াডেন ক্লিফ টাওয়ারের সৃষ্টি। যে টাওয়ারের প্রথম পরীক্ষা তিনি শুরু করেন ১৮৯৮ সালে নিউইয়র্কে। যদিও তার এ প্রজেক্টটি শেষ পর্যন্ত অর্থের অভাবে সম্পন্ করতে পারেননি।

the great sphinx
Photo by Pixabay on Pexels.com

রাতের বেলা ৩টি তারার সাথে একই সরল রেখায় নিখুঁতভাবে ফ্যারও খুফুর পিরামিডের উপর সোজাসোজি সংযোগ ঘটে থাকে। এজন্য অনেকে বলে থাকেন- পিরামিড হল ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের সাথে কমিউনিকেশন টাওয়ার।

তবে এখনো পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারনি যে আসলে কী কারণে এই পিরামিডগুলো তেরি করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *