দূষণের কারণে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ত্বকের সমস্যা এখন সারা বছরই। তবে, শীতকালে সমস্যা যেন একটু বেশিই হয়। ত্বকের বহিঃস্তর বা এপিডারমিসে এ সময়ে জলীয় ভাব কমে যাওয়ায় শুষ্কতা বাড়ে। পাশাপাশি, শীতকালে জল খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে, ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে। সব মিলিয়ে হাত-পা-ঠোঁট ফেটে যাওয়া বা চামড়া ওঠা খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।

শীতকালে জলের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে হাত, পা ও ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। তাই আগে থেকেই পরিচর্যা প্রয়োজন। ঠোঁট শুকোতে শুরু করলে গ্লিসারিন, নারকেল তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। দুপুরে খাওয়ার পরে এবং রাতে শোয়ার আগে ঠোঁটে নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে উপকার পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, গরম জলে একটু নুন ফেলে পাঁচ-সাত মিনিট হাত বা পা ডুবিয়ে রেখে তার পর শুকনো করে মুছে ক্রিম বা ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ইউরিয়া ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

এগজ়িমা কথাটির অর্থ ‘টু বয়েল আউট’। ত্বকের এপিডারমিসের কেরাটিন স্তর থেকে জলকণা বেশি পরিমাণে বেরিয়ে গেলে স্তরটি শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে ফুলে ওঠে। শুরু হয় চুলকানি, রসও গড়াতে পারে। এক সময় জায়গাটি শক্ত হয়ে যায়। একেই প্রাথমিক ভাবে এগজ়িমা বলা হয়। এগজ়িমা হলে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ডিটারজেন্ট, সাবান, আনাজের রস ইত্যাদি আক্রান্ত স্থানে লাগানো যায় না। এগজ়িমার চিকিৎসায় খাওয়ার জন্য হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ও মাখার জন্য স্টেরয়েড ও ইমোলিয়েন্ট ক্রিম ব্যবহার করা হয়। মারাত্মক এগজ়িমা দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হতে পারে।

সোরিয়াসিস একটি ক্রনিক অসুখ। অসুখটির প্রাথমিক লক্ষণ, ত্বকের উপরে লাল চাকা চাকা দাগ ফুটে ওঠে। এর পর ধীরে ধীরে আঁশের মতো উঠতে থাকে। সাধারণত হাত, পা, কনুই, হাঁটু ইত্যাদি এলাকা আক্রান্ত হয়। পিঠের নীচের দিকেও হতে পারে। অনেক সময়ে হাত ও পায়ের নখ আক্রান্ত হয়ে তাতে গর্ত হয়ে যায়। নখের গোড়া ক্ষয়ে আসে। সেখান থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে অসুখটি। একে বলা হয় ইরিথ্রোডারমিক সোরিয়াসিস। এ সময়ে আঙুলের গাঁটে প্রবল যন্ত্রণাও হতে পারে।

সোরিয়াসিসের চিকিৎসার সময়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করা প্রয়োজন। মূলত কোলটার, স্টেরয়েড জাতীয় মলম ব্যবহার করা হয়। রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় খাওয়ার জন্য।

আমাদের ত্বক সাধারণত চার সপ্তাহে এক্সফোলিয়েট হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে। সেটা যখন হয় না, যখন হঠাৎ করে মৃত কোষ পর পর জমে শক্ত হয়ে মাছের আঁশের মতো ত্বকের অবস্থা তৈরি হয়, তাকে ইকথিয়োসিস ভালগারিস বলা হয়। মাছের আঁশের মতো ত্বকের অবস্থা তৈরি হওয়ার কারণে অনেক সময়ে ‘ফিশ স্কেল ডিজ়িজ়’ও বলা হয়।

শরীরের নিম্নাংশে, মূলত পায়ে, হাঁটুর নীচে এই সমস্যা দেখা যায়। দেখা যেতে পারে কনুই ও গোড়ালিতেও। শীতে এই সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে, এই অসুখের চিকিৎসাও শীতকালে করা প্রয়োজন। স্নানের আগে আক্রান্ত স্থানে প্রচুর পরিমাণে নারকেল তেল মেখে স্নান করা উচিত। মাখা যেতে পারে নানা প্রকার ইমোলিয়েন্ট ক্রিমও। এ ছাড়া, ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে।

এপিডারমিসের গভীরতম অংশকে বলা হয় স্ট্র্যাটাম বেসাল। এখানকার কোষ বিভাজিত হয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে এপিডারমিসের উপরের স্তরে। এই কোষগুলির মৃত্যু হলে সেগুলো এপিডারমিস থেকে খসে পড়ে। এই খসে পড়া বা মৃত্যু মাত্রাতিরিক্ত হলেই বলা চলে খুসকি হয়েছে। সেখান থেকেই আসে চুল পড়ার সমস্যা। নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা ও সপ্তাহে দু’দিন যে কোনও স্ক্যাল্প শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি শীতের পোশাক থেকেও হানা দিতে পারে রোগবালাই। কৃত্রিম তন্তু, পশম-সহ নানা উপাদানের মিলমিশে তৈরি গরম পোশাকে ও তাতে ব্যবহৃত নানা রঙের রাসায়নিকের সংস্পর্শে ত্বকের সমস্যা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। গরম পোশাকে প্যারাফিনাইল ডাই অ্যামিন ব্যবহার করা হয়। এর সংস্পর্শে ত্বকে ইরিটেশন হতে পারে। তাই নারকেল তেল ও ক্যালামাইন জাতীয় লোশন লাগিয়ে সুতির পোশাকের উপরে গরম জামা পরুন। এতেও সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Tags:

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *