
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই সমর বিশেষজ্ঞদের অনেকে এই সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন মস্কো তার প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালেও, এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রক্সি ওয়ার বা ছায়া-যুদ্ধ। খবর বিবিসির।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার পর খোদ রাশিয়ার পক্ষ থেকেও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি উভয়পক্ষের মধ্যে এরকম এক সরাসরি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি রুশ যুদ্ধবিমানের সাথে সংঘর্ষের পর পাইলট-বিহীন একটি মার্কিন ড্রোন কৃষ্ণ সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এর জের ধরে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে রাশিয়ার ছায়া-যুদ্ধ কি সম্মুখসমরে রূপ নিতে পারে?
কিন্তু এই সংঘাত শেষ পর্যন্ত রাশিয়া-নেটো ছায়া-যুদ্ধের মধ্যে সীমিত থাকে কি না সে বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সংশয় প্রকাশ করছেন। এরকম সরাসরি যুদ্ধের হুমকি এসেছে ক্রেমলিন থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রসহ নেটো জোটের বিভিন্ন দেশ যখনই কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে, তখনই মস্কো এই জোটের ওপর পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।
সম্প্রতি এই উত্তেজনায় নতুন করে ঘি ঢেলেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এবং আমেরিকার একটি ড্রোনের সংঘর্ষের ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মুখোমুখি হলে কী বিপদ হতে পারে এই সংঘর্ষ তারই ইঙ্গিত দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এরকম সরাসরি সংঘাতের ঘটনা যে এই প্রথম ঘটলো তা নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে রুশ বিমান বাহিনী ইউক্রেনে নেটো জোটের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু সৈন্যকে হত্যা করেছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে, ১৩ মার্চ রাশিয়ার বিমান বাহিনী ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় ইয়াভরিভ শহরে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটোর একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর এই হামলা পরিচালনা করে।
বিমান থেকে এই ঘাঁটির ওপর প্রায় ৩০টি মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল যাতে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের পাশাপাশি নেটোর যেসব সৈন্য ইউক্রেনীয়দের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল তাদের কয়েকজন হতাহত হয়। সরকারি হিসেবে এই হামলায় ৩৫ জন নিহত এবং আরো প্রায় ১২৫ জন আহত হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে তার কোনো ইঙ্গিত কোথাও নেই। কতদিন চলবে, কোন দিকে যেতে পারে এই যুদ্ধ- এ বিষয়েও কারো কোনো ধারণা নেই।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি প্রতিবেশী বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের কথা ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনকে ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ অস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে রাশিয়া কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন- আমেরিকা ও রাশিয়ার সৈন্যরা যখনই একে অপরের দিকে গুলি ছুঁড়ে মারবে তখনই বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন এরকম সংঘাতের সম্ভাবনা নির্ভর করছে নেটোর কোনো সদস্য দেশের এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ওপর।
আর এরকম কিছু ঘটলে ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিপদজনক দিকে মোড় নেবে না সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না।