বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় মস্কোর যতটা না ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ভুগছে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ। মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশ। রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় ইউরোপে দেখা দেয় তীব্র জ্বালানি সংকট। এক কথায় এ যুদ্ধ বড় ঝাঁকুনি দেয় পুরো বিশ্বকে।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত বিষয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা জড়ো করে রাশিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। তবে শান্তি ফেরাতে এখনও সংলাপে বসতে পারেনি কোনো পক্ষ।

কিয়েভ ও যুক্তরাষ্ট্র বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করছিলো ইউক্রেনে হামলা চালাবে রাশিয়া। সেই আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল মস্কো। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া। কয়েক দশক পরে ইউরোপে যুদ্ধ ফেরায় রাশিয়া।

যদিও এই আক্রমনকে বিশেষ সামরিক অভিযান বলে আসছে মস্কো। কিন্তু একে আন্তর্জাতিকভাবে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করে এই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় কয়েক লাখ ইউক্রেনীয়।

পশ্চিমের সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যে কিয়েভের পতন হবে। কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়ায় ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা মিত্র এবং ন্যাটোর অস্ত্র সহায়তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইউক্রেন। চলে পাল্টা হামলা।

ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম কয়েক মাসে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের দখল নেয় রাশিয়া। তবে বছরের দ্বিতীয় ভাগে বেশকিছু এলাকার পুনর্দখল নেয় ইউক্রেন। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে রুশ সৈন্যরা। এখনও অনেক এলাকায় চলছে তুমুল লড়াই।

অন্যদিকে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে রাশিয়াকে রুখতে, একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো।

যদিও এই নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কোর যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভুগছে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ। মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশ। এছাড়া রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় ইউরোপে দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকট।

অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষে রয়েছে ইরান ও বেলারুশ। আর নিরপেক্ষ থেকে রাশিয়াকে সুবিধা করে দিচ্ছে চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্য।

গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করে মস্কো। এর মাধ্যমে চার অঞ্চলকে নিজেদের অধিভুক্ত করে নেয় রাশিয়া।

অক্টোবরের দিকে নতুন কৌশল নিয়ে ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালাতে থাকে রুশ বাহিনী। ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় দেশটিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। বিদ্যুৎসেবা ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তীব্র শীতে মানবেতর দিন পার করছে ইউক্রেনবাসী।

মার্কিন এক শীর্ষ জেনারেল নভেম্বরে জানান, এই যুদ্ধে এক লাখের বেশি রুশ সেনা নিহত বা আহত হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর হতাহতের সংখ্যাও সম্ভবত একই। যদিও ইউক্রেনের দাবি, তাদের ১০ থেকে ১৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছে।

যুদ্ধের তিনশতম দিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো বলেন, ইউক্রেনের অধিকৃত চারটি অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। এ অবস্থায় রুশ নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।

যুদ্ধ বন্ধে এখনও কোন সংলাপ হয়নি রাশিয়া ও ইউক্রেনের। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, আরেকটি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে এখনই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার উপযুক্ত সময়।

চলমান এই যুদ্ধ গড়িয়েছে ১১ মাসে। এই যুদ্ধ কবে বা কীভাবে শেষ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া সম্ভবত আগামী বছরের শুরুর দিকে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করছে।

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *