বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা কথা কাটাকাটির জেরে বিশ্বকাপ দল খেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন উদ্বোধনী ব্যাটার তামিম ইকবাল। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেছেন তামিম নিজেই। তবে বিসিবির কোন কর্মকর্তাকে তাকে ফোন করেছিলেন সেটি নিয়ে কিছু বলেননি তামিম। খবর বিবিসির।

ভিডিও বার্তায় তামিম দাবি করেন, তাকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নিষেধ করা হয়েছিল কিংবা তিনি যদি প্রথম ম্যাচে খেলেন তাহলে তাকে ওপেনিংয়ের পরিবর্তে নিচের দিকে খেলতে বলা হয়।

তামিম আরও দাবি করেন, ক্রিকেট বোর্ডের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে সরাসরি টেলিফোন করে এসব কথা বলেছেন। এর জের ধরে তিনি বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন।

এ সময় তামিম জানান, বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে তার ইনজুরির যে বিষয়টা এর আগে মিডিয়াতে এসেছে তা ঠিক নয়। এছাড়া তিনি পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারবেন না- বলেও যে খবর এসেছে সে বিষয়টিও ঠিক নয় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘মিডিয়াতে যেটা আসতেছে যে ইনজুরি বা পাঁচ ম্যাচ, আমার মনে হয় না যে ওয়ার্ল্ড কাপে না যাওয়ার পেছনে এটার কোনো বড় অবদান ছিল। কারণ আমি এখনো ইনজুরড হই নাই এখনো, ব্যথা থাকতে পারে কিন্তু ইনজুরড হই নাই এখনো’।

মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণার আগে দিনভর নানা নাটকীয়তা চলে। চূড়ান্ত দল ঘোষণার সময় বারবার পেছানোও হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। তামিম ইকবালকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মেডিকেল টিমের সাথে ও বোর্ডের সবার সাথে আলোচনা করেই তামিমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে অনেকগুলো ম্যাচ আছে। তামিমের ইনজুরি থাকায় তাকে নিয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি’।

বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পর ভিডিও বার্তা দেয়ার আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেইজে তামিম ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন।

পরে দেয়া ভিডিও বার্তায় তিনি পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে, ‘আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ ইনভলড আমাদের ক্রিকেটের সাথে। উনি আমাকে ফোন করে হঠাৎ করে বললেন যে, তুমি তো ওয়ার্ল্ড কাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাইতে হবে। তুমি এক কাজ করো তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিও না আফগানিস্তানের সাথে। আমি বললাম, এখনো তো ১২-১৩ দিনের কথা। ১২-১৩ দিনে তো আমি ভাল কন্ডিশনে থাকবো। তাহলে আমি কী কারণে খেলব না? তখন বললো যে আচ্ছা, তুমি যদি খেলো আমরা পরিকল্পনা করতেসি যে, তুমি খেললেও আমরা তোমাকে নিচের দিকে খেলাবো’।

তামিমের ইনজুরি নিয়ে গত তিন মাস ধরেই নানা ধরণের নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আপনাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে আমি কোনো মাইন্ডসেট থেকে আসতেছিলাম’।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ রান করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা ভাল ইনিংস খেলেছি আমি ভাল মাইন্ডসেটে ছিলাম। হঠাৎ করে আবার এসব ধরনের কথা আমার পক্ষে নেয়া সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি, আমি জীবনে কোন দিন তিন-চারে ব্যাটিংই করিনি, এরকম যদি হইতো যে আমি তিনে ব্যাটিং করি, চারে ব্যাটিং করি, তারপরে যদি উপরে-নিচে করা হয় দ্যাট ক্যান বি অ্যাডজাস্টেবল। কিন্তু তিনে, চারে বা পাঁচে ব্যাটিং করার কোন অভিজ্ঞতাই আমার নাই’।

তাকে প্রথম ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকা বা নিচের দিকে ব্যাটিং করার বিষয়টি তিনি ভালভাবে নেননি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম। কারণ আমার বিষয়টি পছন্দ হয়নি। কারণ আমার মনে হয়েছে যে আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে ইচ্ছা করে করে’।

‘তখন আমি বললাম যে, আপনারা একটা কাজ করেন, আপনাদের যদি এরকম চিন্তা ধারা থাকে তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন একেকটা নতুন জিনিস আপনারা আমাকে ফেস করাবেন, আমি এইটার মধ্যে থাকতে চাই না’।

আমি এই জিনিসটাই স্ট্রংলি বলছি যে, ‘এরকম যদি হয় এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। আপনারা দরকার হইলে আমাকে সিলেক্ট করিয়েন না। আমি এইগুলা মানতে পারবো না’।

ভিডিও বার্তার শেষের দিকে তিনি বলেন, ফোনালাপে হওয়া কথাগুলো যদি তার সামনে অন্যভাবে উপস্থাপন করা হতো তাহলে হয়তো তিনি এটাকে মেনে নিতেও পারতেন। তবে হঠাৎ করে যদি কোন কারণ ছাড়া কেউ আপনাকে ফোন করে বলে যে আপনি খেলিয়েন না, বা খেললেও আপনাকে নিচে ব্যাট করানো হবে, তাহলে আমি জানি না যে সেটা কতটুকু ফেয়ার।

নিজের ফিটনেসের বিষয়ে তামিম জানান, লম্বা একটা সময় না খেলা এবং ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার কারণে তার শরীরে অস্বস্তি এবং ব্যথা ছিল। প্রথম ম্যাচের পর তিনি শরীরে ব্যথা অনুভব করেছেন এবং খেলা শেষ হওয়ার পর তিনি বিষয়টি ফিজিওকে জানিয়েছেন। ঠিক সে মুহূর্তেই তিনজন নির্বাচক ড্রেসিং রুমে যায় বলেও তিনি জানান।

তামিম দাবি করেন, তিনি নির্বাচকদের জানিয়েছিলেন যে তার শরীরে একটু ব্যথা থাকলেও শরীর যেমন আছে ঠিক তেমনি থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা (নির্বাচক) যখন টিমটা সিলেক্ট করবেন তখন এই বিষয়টা মাথায় রেখে টিমটা সিলেক্ট করিয়েন’।

এটার কারণ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবসরের ঘোষণা দেয়ার আগে অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে ম্যাচটি খেলেছিলেন সেখানে ইনজুরি একটা উদ্বেগ ছিল। এরপর তার ফিটনেস নিয়ে মিডিয়ায় নানা ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই বলেছে যে, ‘সে যদি ফিট না থাকে তাহলে খেলা উচিত না’।

এ কারণে তিনি আরেকটি বিতর্ক তৈরি করতে চাননি বলেই তিনি সিলেক্টরদের এমন কথা বলেছিলেন বলে জানান।

‘যদি আমি ওয়ার্ল্ড কাপে যাই, এমন হইতে পারে যে, আমি নয় ম্যাচ খেলি কোন সমস্যা ছাড়া, কারণ ওয়ার্ল্ড কাপের ফিকচার টাই এমন ছিল যে, প্রতিটা ম্যাচের পর পর তিন চার দিনের একটা গ্যাপ আছে প্রথম দুইটা ম্যাচ ছাড়া। তাহলে কিছু হবে না’।

‘আবার এমনও হইতে পারে, এটা যে কোন সুস্থ মানুষের সাথেও হইতে পারে যে দুইটা ম্যাচ খেলার পর ইনজুরড হইল, তাকে দেশে পাঠায় দিলো, তার রিপ্লেসমেন্ট গেলো। এজন্য আমি এই জিনিসটা তাদেরকে বলি’।

তামিম ইকবাল দাবি করেন, ফিজিও রিপোর্ট তার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। এরপর দুই দিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার মূল্যায়ন করা হয় বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে তিনি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য ‘অনেক ভালো অবস্থায়’ আছেন বলে ভিডিও বার্তায় জানান তামিম ইকবাল।

লেখা : বিবিসি অবলম্বনে

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *