![ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল](https://www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/08/England_Cricket_Team.jpg)
ক্রিকেট বিনোদনের দুনিয়ায় নতুন তরঙ্গ তুলেছে ইংল্যান্ড। গত এক বছরে অনেকখানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই খেলার জন্মদাতা দল। ২০২২ সালের মে মাস থেকেই সেদেশের টেস্ট দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। তারপর থেকেই ঘুরছে মোড়। ভক্তরা সেদেশের খেলায় দেখেছেন এক নতুন পরিবর্তন, তাকেই নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাজবল’। খেলোয়াড়রা বলছেন, বাজবল আসলে নীতি, খেলার ধরন। খবর বিবিসির।
গত বছরের মে মাসে ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের দায়িত্ব যখন নেন, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের একজন কোচ কীভাবে টেস্ট ক্রিকেটের দায়িত্ব নেবেন? তাও আবার অভিজাত দল হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডের। ম্যাককালাম আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ হিসেবে কাজ করতেন এর আগে।
গত বছরের শেষদিকে পাকিস্তান সফরে বেন স্টোকস বলেন, “আমি ছেলেদের বলেছি, আমরা বিনোদন জগতে কাজ করি, আমাদের কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়া, আমরা চেষ্টা করবো প্রতিটি টেস্ট ম্যাচেই মানুষ যাতে আনন্দ পায় সেটা নিশ্চিত করা”।
![close up photo of a red cricket ball](https://i0.wp.com/www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/08/pexels-photo-5519470.jpeg?resize=640%2C427&ssl=1)
এটা কেবল মুখের কথা নয়, ম্যাককালাম-স্টোকস যুগে এই আনন্দ দেয়ার কাজটাই করে আসছে দলটি। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এক ইনিংসে দ্রুততম ৪০০ ও ৫০০ রানের মালিক এখন ইংল্যান্ড।
কী এই বাজবল, তা নিয়ে আপাতত সরগরম ক্রীড়ামোদী মানুষ। ইংল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটাররা বলছেন, আসলে ক্রিকেট হল বিনোদন। দীর্ঘদিনের নিয়ম মাফিক টেস্ট ক্রিকেট এখন বেশ ঝিমিয়ে পড়েছে। উঠে এসেছে টি-২০-র মতো খেলার রীতি। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই নতুন তত্ত্ব টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন গতি দিতে পারে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রতিবেদক অ্যান্ড্রু মিলার প্রথম বাজবল নামটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, এরপর থেকে ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নামলেই এই শব্দটি উচ্চারিত ও লিখিত হয়ে আসছে।
বাজবল ক্রিকেট প্রথম বড় ধাক্কা খেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লর্ডসে, স্টোকস-ম্যাককালামের কোচ-অধিনায়ক জুটি প্রথমবারের মতো হারের মুখ দেখে, তাও তিনদিনের মধ্যে এবং ইনিংস ব্যবধানে।
স্টোকস বলেন, “সেদিন আমি ড্রেসিং রুমে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি জিগ্যেস করি, তোমরা কেউ গলফ খেলতে চাইলে হাত তোলো”।
“সবার মধ্যে একটা স্বস্তি নেমে আসে, আমরা হালকা হতে থাকি”। স্টেফান শেমলিট লিখেছেন, ‘চাপ সরে গেল, যোগ হল আনন্দ’।
ব্রেন্ডান ম্যাককালাম কীভাবে টেস্ট ক্রিকেটের অনুশীলনের ধরন বদলে দিয়েছেন বিবিসির এই প্রধান ক্রিকেট লেখক তার লেখায় তুলে এনেছেন।
“স্টোকস ও ম্যাককালামের মধ্যে ছক্কা মারার প্রতিযোগিতা হয়, যে হারবে সে হ্যারি ব্রুককে ডিনার সার্ভ করবে, পেনাল্টি শুটআউটের অনুশীলন হয় এখন, অনুশীলনের সময় ব্রেন্ডান ম্যাককালামের পছন্দের মিউজিক ট্র্যাক বাজতে থাকে, যদিও ম্যাককালামের সংগীতের রুচি নিয়ে সবাই নিশ্চিত নন”।
২০২২ সালের পাকিস্তান সফরের আগে গোটা দল আবুধাবিতে গ্রা প্রি দেখতে গিয়েছিল, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে কোচ ম্যাককালামের দাওয়াতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল কুইন্সল্যান্ডে, ম্যাককালাম নিজের দেশটা অল্প বিস্তর ঘুরে দেখান লিখেছেন স্টেফান শেমলিট।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সফরে মূলত বাজবল তার পূর্ণ রূপ দেখতে পায়, যার পরিপূর্ণতা পায় নিউজিল্যান্ড সফরে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড ১০১ ওভারে ৬৫৭ রান তোলে।
এই টেস্টেও ইংল্যান্ড চার সেশন হাতে রেখে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছিল, রাওয়ালপিন্ডির ডুবতে থাকা সূর্যের আলোতে পাকিস্তানের ১০ উইকেট নিয়ে জয় তুলে নিয়েছিল বাজবল ক্রিকেটাররা। তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনেই ১৬৭ রানের লক্ষ্য টারা করেছিল মাত্র ২৮ ওভার ব্যাট করে।
বেন স্টোকস তখনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফল যাই হোক, এই দল খেলার ধরন বদলাবে না, এই অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচেও তার প্রমাণ মিলেছে। এই ম্যাচেও হারের পর ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বলেন, “আমরা ফল নির্ভর দল নই, আমরা অস্ট্রেলিয়াকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু আরও ম্যাচ বাকি আছে”।
“আবেগের উত্থান পতন ছিল চরমে, এটাই খেলাটি থেকে আমাদের পাওয়া, এ কারণে আমরা খেলে যাই”।
লেখা : বিবিসি অবলম্বনে