দেশে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সম্প্রতি অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এত অভিভাবকরা কয়েকটি মানববন্ধনও করেছেন। এবছর পরীক্ষামূলক কয়েকটি স্কুলে এ শিক্ষাক্রম চালু হলেও আগামী বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে পুরোদমে এ শিক্ষা কারিকুলাম চালু করতে যাচ্ছে সরকার।

এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর এ নিয়েই বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

নতুন শিক্ষা কারিকুলামে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না। মাধ্যমিক বা এসএসসি এবং উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষার পদ্ধতিও পাল্টে যাবে। নবম শ্রেণিতে থাকবে না কোনো বিভাগ। একাদশ শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা- এই তিন বিভাগ থেকে যেকোনো একটি পছন্দ করবেন।

এ বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।

তবে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করছেন। পাশাপাশি তারা উদ্বেগও প্রকাশ করেছে এ নিয়ে।

আতিকুল ইসলাম নামের একজন অভিভাবক জানান, এই শিক্ষা কারিকুলামে গণিত ও বিজ্ঞানে কম জোর দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।

man in black and white polo shirt beside writing board
Photo by Pixabay on Pexels.com

নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার চেয়ে ব্যবহারিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার ফলে পড়ার চেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক নানান কাজের চাপ বেড়েছে, যা অনেক অভিভাবকের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরেক অভিভাবক পারভীন সুলতানা বলেন, ‌’আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। আগে সন্ধ্যা হলে সে পড়তে বসতো। এখন তারে একেবারেই পড়তে বসানো যায় না। সারাক্ষণ কি নাকি সব অ্যাসাইন্টমেন্ট করে; বন্ধু-বান্ধবের সাথে বসে থাকে। আমি কিছুই বুঝতেছি না। না পড়লে শিখবে কীভাবে?’

এদিকে, শিক্ষাবিদদের ধারণা, পরিপূর্ণ প্রস্তুতি না নিয়েই সরকার নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‌’শিক্ষা কারিকুলামটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য অনেক জায়গায় দুর্বলতা আছে।’

এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণের আগে প্রয়োজনীয় গবেষণার পাশাপাশি এর সাথে জড়িত প্রতিটি অংশীদারের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

‘অভিভাবক এবং শিক্ষকরা এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় দুই অংশীদার। কিন্তু শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের আগে তাদের সাথে কি বসা হয়েছে? বসা হলে কয়জনের সাথে আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করা হয়েছে? তাদের সাথে আলোচনা করে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে আমি মনে করি।’- বলেন মো. মজিবুর রহমান।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদা নিরূপণ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়। এরপর একাধিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে ২০২১ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ তৈরি করা হয়।

সরকারের অনুমতিক্রমে ২০২২ সালে ৬০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। এর ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে সারা দেশে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হয়।

তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই কাজ শুরু করেছি। তারপরও যেসব সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। পরবর্তীতে প্রয়োজন মনে করলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে। আপাতত ছেলে-মেয়েরা নতুন শিক্ষাক্রমেই পড়বে। যুগের সাথে তাল মেলাতে এর কোনো বিকল্প নেই।’

কী আছে নতুন শিক্ষাক্রমে
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লে-তে শিশুদের জন্য এখন আর কোনো বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষেই শিক্ষকরাই তাদেরকে সরাসরি শেখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদেরকে মাত্র তিনটি বই পড়ানো হবে। তবে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে।

পরে শ্রেণিগুলোর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম- দুটোই থাকছে। এক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে ৩০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়নই করা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন সময়ে। বাকিটা আগের মতোই পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার কর হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট দশটি বিষয়ে পড়ানো হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প কলায় শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।

আর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বা বছর শেষে পরীক্ষায় থাকবে ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

composition creativity desk education
Photo by Pixabay on Pexels.com

এরপর শিক্ষার্থীদের এখন নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য- এই তিন বিভাগে ভাগ হবে৷ এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন।

এছাড়া নতুন পাঠক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুসারেই অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

একইভাবে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ধরনও বদল হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ন করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। আর প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।

পরিবর্তনগুলো কী কী
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্র পরীক্ষার ওপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নকে বেশি গুরুত্ব পাবে।

আগে প্রথম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হতো, এখন প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। এছাড়া চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে আবশ্যিক বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে আগে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত নেওয়া হতো। কিন্তু এসব পরীক্ষা এখন আর থাকছে না। বরং শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেই পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে এবং সে অনুযায়ী সনদ দেওয়া হবে।

আগে নবম শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের মধ্য থেকে পছন্দমতো যেকোনো একটি বিভাগ বেছে নিতে পারত। কিন্তু এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সবাইকে একটি অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের উপরে ভিত্তি করেই এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নবম ও দশম শ্রেণির বই আলাদা হবে এবং কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের উপরে ভিত্তি করেই এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আগে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পড়ার পর একটি বোর্ড পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। সেটি পরিবর্তন করে এখন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হবে। এরপর দুই পরীক্ষা ও শিখনকালীন মূল্যায়নের সমন্বয় করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ
নতুন পাঠ্যক্রমের সমালোচনা করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকেরা। সম্প্রতি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শহীদ মিনারের সামনে অভিভাবকদের উদ্যোগে দুটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একজন অভিভাবক জানান, কারিকুলাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাধারণত আগের কারিকুলাম থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পরিবর্তন করার কথা বলা হয় এবং তা করার ক্ষেত্রে পূর্বশর্তগুলো হাজির রাখতে হয়। কিন্তু এই কারিকুলামের কোনও পূর্বশর্ত হাজির না করে আগেরটার খোলনলচে-সহ সব পালটে দেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা শিক্ষকরাও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। কিছু ট্রেনিং আমরা পেয়েছি। কিন্তু শিক্ষাক্রমে যেভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, হুট করে সেটার সাথে তাল মেলানো আমাদের পক্ষে কঠিন, ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষেও কঠিন।’

এদিকে, নতুন শিক্ষাক্রম গ্রহণ করা হলেও সেটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রস্তুত নেই বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমানের মতে, বাংলাদেশে এমনিতেই শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। তারপরও শিক্ষক যারা আছেন, তারা কি এই পাঠ্যক্রমে পড়ানোর জন্য প্রস্তুত? সেই প্রশিক্ষণ বা সক্ষমতা কি তাদের আছে?

এসব বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের ভাষ্য, ‘তারা না জেনে না বুঝে বিরোধিতা করছেন৷ যুগের প্রয়োজনেই কারিকুলাম আপডেট করা হয়েছে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমরা একমুখী আধুনিক শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছি। এটা না করলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পৃথিবীর অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে পারবে না। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গেলে আমাদের এই শিক্ষাক্রমে যেতে হবে। আমরা কিন্তু ওদের থেকে হুবহু গ্রহণ করিনি। আমাদের মতো করে গ্রহণ করেছি।’

ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্টেলিয়া-সহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষাক্রম দেখেই নতুন শিক্ষাক্রম করা হয়েছে বলেও জানান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান।

এছাড়া বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

‘গত বছর আমরা নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তারপর জানুয়ারিতে চালু করেছি৷ এবারও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মধ্যেই সবাই প্রশিক্ষণের আওতায় চলে আসবে বলে আশা করি।’ বলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, যেটি ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন নামে বেশি পরিচিত। এরপর ১৯৮২ সালে মজিদ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭ সালে মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৯৭ সালে শামসুল হক শিক্ষা কমিশন, ২০০১ সালে এমএ বারী শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ সালে মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন এবং সর্বশেষ ২০০৯ সালে কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।

লেখা : বিবিসি অবলম্বনে

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *