![clever female student reading book in library](https://www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/03/pexels-photo-3808060.jpeg)
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাক্রম চলু করেছে সরকার। জীবনমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টায় সরকার এ শিক্ষাক্রম চালু করে। শিক্ষাক্রম নিয়ে অতীতে একাধিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এবার আশা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে নতুন এ শিক্ষাক্রম।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৬০টি স্কুলে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিংয়ের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে ২০২৭ সালে।
এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। বাড়বে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
![crop pupils writing in copybook on desk](https://i0.wp.com/www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/03/pexels-photo-5905959.jpeg?resize=640%2C427&ssl=1)
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে জোর দেয়া হয়েছে ধারাবাহিক মূল্যায়নে (শিখনকালীন)। অর্থাৎ মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে।
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ কী?
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ হলো দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তাল মিলিয়ে চলতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে পারার লক্ষ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত নতুন কারিকুলাম।
এই নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যেটি ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০টি বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ২০২৩ সাল থেকে সারা বাংলাদেশে এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
![composition creativity desk education](https://i0.wp.com/www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/03/pexels-photo-207756.jpeg?resize=640%2C480&ssl=1)
এ বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০২৪ এ তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে এটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং সম্পন্ন হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান পদ্ধতি
নতুন শিক্ষক্রম এর পাঠদান পদ্ধতি হলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক। যেটিকে এনসিটিবি বলছে, অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি। যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবেন এবং আনন্দের সাথে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে তার মেধার বিকাশ ঘটবে।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন বলতে এমন শিখন কার্যক্রমকে বোঝায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়ে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে। এই শিখন পদ্ধতিতে ৪টি পর্যায় বা ধাপ রয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা উপকরণ শুধুমাত্র বই নয়। বই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ। তার সাথে আরও যুক্ত হবে ভিডিও, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ইউটিউব, গুগল, ভ্রমণ, লাইব্রেরি, শিক্ষক, পিতামাতা, বড় ভাইবোনসহ বিভিন্ন যায়গা, পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ব্যক্তিই হবে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষা উপকরণ।
নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য সম্পূর্ণ নতুনরূপে বই প্রণয়ন করা হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দিয়ে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন ও মূল্যায়নে গুরুত্বারোপ করায় পাঠ্যবইয়ে থাকছে না কোনো প্রশ্ন বা অধ্যায় শেষে কোনো অনুশীলনী। বইতে থাকছে বিভিন্ন কাজের ছক ও নির্দেশনা।
পরীক্ষা পদ্ধতি
নতুন শিক্ষাক্রমে সবচাইতে বড় পরিবর্তনটি হল মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। আমারা বিগত সময়ে পরীক্ষার মাধ্যমেই মূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত। কিন্তু এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা থাকছে না এই বিষয়টি।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা থাকবে না। এই ক্লাসগুলোতে শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার ওপর।
চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে আর ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার উপর।
![close up of hands](https://i0.wp.com/www.muktojanala.com/wp-content/uploads/2023/03/pexels-photo-249360.jpeg?resize=640%2C427&ssl=1)
আর অন্যান্য বিষয় যেমন ধর্ম শিক্ষা, শিল্পকলা ও মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়িত হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করে।
ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে আর বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতার উপর।
আর বাকি পাঁচটি বিষয়ের শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বিষয়গুলো হলো- ধর্ম শিক্ষা, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শিল্প ও প্রযুক্তি।