ইরাকের কুর্দিস্তানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলে বই অনুবাদ করেন রেজিন আহমেদ আলি। তিনি নিজেও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। রেজিনের বিশ্বাস তার এই উদ্যোগ একদিন সুফল বয়ে আনবে, উপকৃত হবে তার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।
নিজের ছোট্ট কক্ষে বসে গান শুনতে শুনতে একমনে টাইপ করে যাচ্ছেন ২১ বছরের কুর্দি তরুণী রেজিন আহমেদ আলি। চলছে ব্রেইল ভাষায় বই লেখার কাজ।
একবার কুর্দি ভাষায় লেখা ব্রেইল বই খুঁজতে হিমশিম খেতে হয়েছিল ইরাকি শহর ডোহুকের বাসিন্দা রেজিনকে। এরপরই তার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলে বই অনুবাদের কাজ শুরু করেন তিনি।
ব্রেইল অনুবাদক রেজিন আহমেদ আলি বলেন, “যখন আমি আমার বন্ধুদের সাথে লাইব্রেরি পরিদর্শন করি, আমি লক্ষ্য করি যে বিভিন্ন ভাষার অনেক বই রয়েছে। কিন্তু আমাদের লাইব্রেরিতে সেসময় বইয়ের ব্রেইল ভার্সনের অভাব রয়েছে। যার কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা এসময় বই পড়তে পারেন না। তাদের জন্যই ২০২২ সালে থেকে এই ব্রেইল বই লেখার কাজ শুরু করি”।
এক শিক্ষকের কাছ থেকে ব্রেইল প্রিন্টার ধার নিয়ে কাজ শুরু করেন রেজিন। রেজিনের বিশ্বাস তার এই কাজ একদিন সুফল বয়ে আনবে। উপকৃত হবে তার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা।
“মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং অন্যান্য বৈচিত্র্যপূর্ণ বইয়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরাও অন্য যেকোনো ব্যক্তির মতো পড়তে এবং লিখতে পারি। কিন্তু পর্যাপ্ত ব্রেইল বইয়ের আভাবে তা বাধাগ্রস্ত হয়। ২০ থেকে ৪০টি বই যদি ব্রেইলে ছাপানো যায়, তাহলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বইয়ের অভাব কমে আসবে”- বলেন রেজিন আহমেদ আলি।
বন্ধুদের সাহায্যে কোন বইয়ের পুরোটা অডিও রেকর্ড করেন রেজিন, পরে তা শুনে শুনে টাইপ করে ব্রেইলে অনুবাদ করেন। পুরো কাজটি যে বেশ সময় সাপেক্ষ, স্বীকার করেন রেজিন নিজেও। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি।
রেজিন আহমেদ আলি আর বলেন, “আমি যে বইটিতে কাজ করছি সেটি ব্রেইলে অনুবাদ করা আমার তৃতীয় বই। ব্রেইলে বই ছাপতে অনেক সময় লাগে। কারণ আমার এমন একজনের প্রয়োজন হয় যে আমার জন্য একটি গোটা বই পড়বে এবং এটি রেকর্ড করবে, যাতে আমি বইটি অনুবাদ করতে পারি। সেই সাথে বানান পরীক্ষার কাজটিও গুরুত্বপূর্ণ”।
অন্যান্য ইরাকির তুলনায় দৈনন্দিন জীবনযাপনে বেশ লড়াই করতে হয় কুর্দিস্তানের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার সুযোগ কেবল মাধ্যমিক পর্যন্ত-ই।