মুক্ত জানালা ডেস্ক

একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করল। এর ফলে সৃষ্টি হলো ভূমিকম্প, সুনামি ও দাবানল ইত্যাদির মতো কিছু প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ছাই দিয়ে তৈরি হলো মেঘ। আর এটি সূর্যকে ঢেকে রাখল প্রায় এক দশক কাল। এই সময়টা পুরো পৃথিবীই থাকল অন্ধকারে নিমজ্জিত। এই মহাবিপর্যয়ে মৃত্যু হলো পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণী ও গাছপালার। না, কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সিনেমার গল্প বলছি না! প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে আমাদের বসবাসের এই পৃথিবীতে ঘটেছিল এমন ঘটনা। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই মহাবিপর্যয়ের কারণেই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল প্রায় ১৪ কোটি বছর ধরে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলা পরাক্রমশালী প্রাণী ডাইনোসর। খবর বিবিসির।

ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় যে প্রাণীদের মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এবং কোনো ধরনের খাদ্য ছাড়াই দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার সক্ষমতা ছিল শেষ পর্যন্ত তারাই টিকেছিল। আর এখানেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন এক নাটকীয়তা! যে দুর্ঘটনার কারণে ডাইনোসর হারিয়ে গেল সেই একই কারণে সাপ এক জায়গা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল!

বিজ্ঞানীদের মতে, এই মহা-বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবী থেকে ৭৬ শতাংশ গাছপালা ও পশুপাখি হারিয়ে যায়। তবে যেসব প্রাণী এর মধ্যেও বেঁচে থাকতে পেরেছিল তাদের মধ্যে রয়েছে সাপ, কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ব্যাঙ এবং মাছ। এদের মধ্যে সাপের টিকে থাকার কাহিনি আরো চমকপ্রদ।

ব্রিটেনে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সাপ নাটকীয়ভাবে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই দুর্ঘটনার কারণেই তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে যেসব সরীসৃপ, ওই বিপর্যায়ের পরে তারা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হয় আজকের দিনে যে ৩ হাজার ৭০০ কিংবা তার চেয়েও বেশি প্রজাতির সাপের কথা জানা যায় সেগুলো গ্রহাণুর আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া সাপ থেকেই বিবর্তিত হয়েছে।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সাপ অত্যন্ত সফল একটি প্রাণী। এন্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই এই প্রাণীটিকে পাওয়া যায়। ছবি ক্রেডিট : উইকিমিয়া কমনস

যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া ড. ক্যাথরিন ক্লেইন বলেন, গ্রহাণুর আঘাতে পরিবেশের খাদ্যচক্র ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সাপ বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। পরে তারা আরো বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আরো পরে এসব সাপ ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন মহাদেশে। ভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এসব সাপ নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে। গ্রহাণুর এই আঘাতের ঘটনা ছাড়া এসব সাপ আজকের পর্যায়ে পৌছাতে পারতো না বলেই মনে হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রহাণুটি পৃথিবীর যে স্থানে আঘাত হেনেছিল বর্তমানে সেটি মেক্সিকো। ওই সময়ে সেখানে যেসব সাপ ছিল সেগুলোর সাথে আজকের দিনের সাপের অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন পা বিহীন সাপ এবং শিকার গিলে খাওয়ার জন্য লম্বা করা যায় এরকম চোয়াল বিশিষ্ট সাপ। হাতেগোনা অল্প কিছু প্রজাতির যেসব সাপ সেসময় বিরাজ করছিল তার মধ্যে ছিল, প্রধানত, মাটির নিচে, জঙ্গলের মাটিতে অথবা স্বাদু পানিতে বসবাস করে এ ধরনের সাপ। সেখান থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে তাদের ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।

খাবার ছাড়া এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার ক্ষমতা এবং অন্ধকারের মধ্যেও শিকার করার দক্ষতাই এসব সাপ বেঁচে থাকার পেছনে প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

জানা যায় প্রথমে তারা গিয়েছিল এশিয়া মহাদেশে। এর পর সময়ের সাথে সাথে সাপের আকার আরো বড়ো এবং বিস্তৃত হতে থাকে। তারা খুঁজে বের করে নতুন বসতি। সন্ধান করে নতুন শিকারের। এভাবেই নতুন ধরনের সাপের আবির্ভাব ঘটে যার মধ্যে রয়েছে সি স্নেইক বা সমুদ্র সাপ যেগুলো ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

two dinosaur statues
Photo by Mike Bird on Pexels.com

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সাপে বিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সময় হচ্ছে যখন এই পৃথিবী উষ্ণ থেকে ঠাণ্ডা জলবায়ুতে রূপান্তরিত হয়েছিল তখন। এর অল্প কিছু পরেই শুরু হয় বরফ যুগ বা আইস এইজ।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সাপ অত্যন্ত সফল একটি প্রাণী। এন্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই এই প্রাণীটিকে পাওয়া যায়। সমুদ্র থেকে শুষ্ক মরুভূমি- সব ধরনের পরিবেশেই এটি বেঁচে থাকতে পারে। সাপ যেমন মাটির নিচে থাকতে পারে তেমনি থাকতে পারে গাছের মাথার উপরেও। এর আকারও হয় বিভিন্ন রকমের- কয়েক সেন্টিমিটার থেকে ছয় মিটার পর্যন্তও। কীটপতঙ্গ ইঁদুর ব্যাঙ ইত্যাদি শিকার করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সাপ। মানুষের সাথে সংঘাতের কারণে তাদের বহু প্রজাতি এখন হুমকির মুখে।

যেসব ঘটনায় তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যু ঘটে এরকম বিপর্যয় পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র কয়েকবারই ঘটেছে।

লেখা : বিবিসি অবলম্বনে

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *