জলবায়ু ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন ‘পলিনেট হাউজ’ কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। আধুনিক এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি সারাবছর উৎপাদন করতে পারবেন কৃষকরা। এ পদ্ধতি কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎপাদন বাড়াতে নতুন গবেষণা শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে ‘পলিনেট হাউস’ এর মাধ্যমে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি বছরের যে কোনো সময় উৎপাদন করা যাবে।
কৃষকরা একটি পলিনেট হাউসে বিভিন্ন প্রকারের ফসল চাষ করতে পারেন, যেমন সবজি, ফল, মসলা এবং ফুল। একটি পলিনেট হাউসে সেচ পদ্ধতি হল স্বচ্ছ পানি ব্যবহার করে এবং একটি সঞ্চয়পূর্ণ পানি সিস্টেমের মাধ্যমে সেচ করা হয়। এছাড়াও, পলিনেট হাউসে ফসলে বাকটেরিয়া এবং উদ্ভিদজ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে পলিনেট হাউজের ক্ষেত-খামার। এ পদ্ধতিতে শাক-সবজির চাষে লাভের আশা কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ এসএম হাসানুজ্জামান বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে জয়পুরহাটে ২টি পলিনেট হাউজ নির্মাণ করা হয় সরকারি অর্থায়নে। পরীক্ষামূলকভাবে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এছাড়া কম মূল্যে বিষমুক্ত খাদ্য পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসী।
প্রকল্পের মাধ্যমে ভোক্তা ও কৃষকরা উপকৃত হতে পারেন, সে ব্যাপারে তদারকি করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
পলিনেট হাউসের মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না।
‘পলিনেট হাউস’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে দেশের সব বিভাগে অন্তত একটি করে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন কৃষক। দেশের সবজি ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগের এমন ২১টি ‘পলিনেট হাউস’ তৈরি করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়িতে তৈরি পলিনেট হাউসে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষক। পবা উপজেলার খড়খড়িতে ‘কৃষক বন্ধন বিসমিল্লাহ্’ নার্সারির স্বত্বাধিকারী শামসুল আলম কাদুর ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি সহযোগিতায় পলিনেট হাউস করে দেওয়া হয়েছে।
এতে উন্ন মানের পলি ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলিপেপার দিয়ে তিনটি শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে প্রায় ২০ বছর।
প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকা শোধ দিতে হবে না। শামসুল আলমকে একটি শর্ত দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তা হলো- এখানে উৎপাদিত বীজ, শাক-সবজি ও ফলমূল স্থানীয়ভাবে সবার কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে হবে। সংরক্ষণ করতে হবে রসিদ বই।
কৃষি বিভাগ জানায়, পলিনেট হাউসে ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি আছে।