মুক্ত জানালা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রমেই আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রা হয়ে ওঠার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি থেকে জলবায়ু, প্রকৌশল থেকে যুদ্ধের মাঠ— সর্বত্রই এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের মোড় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই ঘুরিয়ে দেবে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়। সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ের প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হবে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক আর্থার সি ক্লার্ক আগেই সতর্ক করেছিলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বগ্রাসী আচরণ সম্পর্কে। ‘২০০১: আ স্পেস অডিসি’ উপন্যাসে তিনি যন্ত্রের আধিপত্য বিস্তারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে অনেক সতর্কতামূলক কথা লিখেছিলেন। অবশ্য যুদ্ধ ও ভূ-রাজনীতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে খুব একটা লেখালেখি হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির উত্থান ও সেসব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আরও জোরেসোরে আওয়াজ তোলার সময় সম্ভবত এসে গেছে।

code projected over woman
Photo by ThisIsEngineering on Pexels.com

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কথা বলার সময় আপনার মনে পড়ে যেতে পারে শতবর্ষী যুদ্ধ অ্যাজিনকোর্টের কথা। ১৪১৫ সালে যুদ্ধটি হয়েছিল উত্তর ফ্রান্সের অ্যাজিনকোর্টের কাছে। রাজা পঞ্চম হেনরির নেতৃত্বে সেই যুদ্ধে ব্রিটিশরা অনেক উদীয়মান প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সাংবাদিক জেমস স্টাভরিডিস বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ভুল করে ইরানের একটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজকে ভূপাতিত করেছিল। তখন প্রায় ৩০০ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার এভাবেই শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।’

এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অনেক কিছুই সনাক্ত করা হয়। বিশেষ করে সামরিক ও বেসামরিক উড়োজাহাজ সনাক্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা কি কমবে? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারবে না। বরং ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অত্যন্ত বিশদভাবে কৌশলগত তথ্য সরবরাহ করতে পারে এবং নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে পারে। কখনো কখনো শত্রু পক্ষের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোও চিহ্নিত করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অত্যন্ত বিশদভাবে কৌশলগত তথ্য সরবরাহ করতে পারে এবং নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

সাংবাদিক জেমস স্টাভরিডিস বলেন, ‘২০১১ সালে লিবিয়া অভিযানের সময়ে আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখেছিলাম।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হলো, সিনক্রোনাইজড অ্যাটাক ফরমেশনের মাধ্যমে ড্রোনের বিশাল ঝাঁক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের খরচও কম। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে ড্রোন পরিচালনার জন্য ইউক্রেন বাহিনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

shallow focus photo of stormtrooper
Photo by Craig Adderley on Pexels.com

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের মনস্তত্ত্ব বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ও তথ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বড় ধরনের তথ্যবিভ্রান্তি তৈরি করতে পারলে শত্রুবাহিনীও ভুল প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

উদাহরণ হিসেবে গত সপ্তাহে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া পেন্টাগনের ওপর আগুন জ্বলার ছবিটির কথা বলা যায়। ইউক্রেন এই যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নকল ছবি, মিথ্যা গল্প ও ছায়া অপারেশনের কথা ছড়িয়ে দিয়ে রুশদের মনোবল ধসিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। একই ধরনের কাজ করতে পারে রুশ বাহিনীও।

আবার সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে ভয়ানক। যুদ্ধের মাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে এখন প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে যুদ্ধ করতে হয়।

সুতরাং প্রতিপক্ষের সাইবার নেটওয়ার্ক দখলে রাখার জন্যও সামরিক বাহিনীগুলো কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে।

সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির পরীক্ষাগার হতে যাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ময়দান। সেই পরীক্ষায় সফল হলে হয়তো প্রথাগত যুদ্ধের ধরণই আমূল বদলে যেতে পারে।

তথ্য সূত্র : ব্লুমবার্গ

Muktojanala

সমসাময়িক সকল বিষয়ের মুক্ত তথ্যের অনলাইন প্লাটফর্ম।

https://www.muktojanala.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *